বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফলন বাড়ায় মিষ্টিকুমড়ার কৃত্রিম পরাগায়ন

খোন্দকার মো. মেসবাহুল ইসলাম
  ২৪ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মিষ্টিকুমড়ার পরাগায়ন সাধারণত প্রাকৃতিকভাবেই বিভিন্ন পোকার দ্বারা বিশেষ করে মৌমাছি, বোলতার দ্বারা সম্পন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু কখনো কখনো পোকার পর্যাপ্ত উপস্থিতি না থাকায় মিষ্টিকুমড়ার পরাগায়ন হয় না এবং কচি ফল হলুদ হয়ে ঝরে যায়। এ ছাড়া পুরুষ ফুলের সংখ্যা কম থাকায় বা না থাকায়, একই সময়ে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পরিপক্কতালাভ না কারায়, ক্ষতিকর পোকা পুরুষ ফুলের পরাগ দন্ড বা স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ড খেয়ে ফেললে অথবা বৃষ্টিতে পরাগরেণু ধূয়ে নষ্ট হলেও পরাগায়ন হয় না। এসব কারণে মিষ্টিকুমড়ার ফলন বাড়াতে কৃত্রিম পরাগায়ন প্রয়োজন হয়। কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে ৩০-৩৫ ভাগ পর্যন্ত ফলন বাড়ানো সম্ভব। মিষ্টিকুমড়ার পুরুষ ও স্ত্রী ফুল সংগ্রহ করে কৃত্রিম পরাগায়নের কাজটি করতে হয়। মিষ্টিকুমড়ার একই গাছে স্ত্রী ও পুরুষ ফুল ধরে। পুরুষ ফুলে শুধুমাত্র বোঁটার উপরে ফুলের পরাগদন্ড ও তাতে পরাগ রেণু থাকে। স্ত্রী ফুলের পাপড়ির নিচে সব সময় ছোট আকারের একটি ফল থাকে।

পরাগায়নের সময় ও পদ্ধতি

সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অথবা সকালে যতক্ষণ পর্যন্ত রোদের তাপ কম থাকে (যা শরীর স্বাভাবিকভাবে সহ্য করতে পারে। লাউয়ের ক্ষেত্রে সন্ধ্যার পর আবছা আলো থাকা পর্যন্ত পরাগায়ন করা ভালো। পুরুষ ফুলের পাপড়িগুলো একটি একটি করে গোড়ার দিকে আস্তে করে টেনে টেনে ছিঁড়ে পরাগদন্ডটি উন্মুক্ত করতে হয়। স্ত্রী ফুলের পাপড়িগুলো হাত দিয়ে আলতো করে নিচের দিকে চেপে ধরতে হয়, যাতে পাপড়ির গোড়া ভেঙে না যায় বা পাপড়িগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এরপর পুরুষ ফুলটি স্ত্রী ফুলের গর্ভদন্ডের মাথার কাছাকাছি নিয়ে সংস্পর্শ ছাড়াই পুরুষ ফুলে আস্তে করে টোকা দিতে হয়। এতে পরাগদন্ড থেকে পরাগ রেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে পড়ে। এভাবে কৃত্রিম পরাগায়ন প্রক্রিয়া শেষ হয়।

পরাগায়নের সময় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়

মাটিতে প্রয়োজনীয় রসের জোগান অবশ্যই থাকতে হয়। পুরুষ ফুলের পরাগদন্ড দিয়ে স্ত্রী ফুলের পরাগদন্ড কখনোই ঘষে দেয়া ঠিক নয়। পুরুষ ফুলের পরাগদন্ডে টোকা দিয়ে পরাগ রেণু স্ত্রী ফুলের পরাগদন্ডের উপর ফেলতে হয়। পরাগায়নের সময় সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়। সকাল থেকে দিনের সময় যত বেশি পেরিয়ে যায়, তাপমাত্রা তত বাড়তে থাকে আর এতে পরাগ রেণু শুকিয়ে পরাগায়নের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। তাই সকালের দিকেই পরাগায়ন করা ভালো। পরাগায়নের সময় কোনোভাবেই যেন পুরুষ ও স্ত্রী ফুল ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। দূর থেকে কোনো পুরুষ ফুল সংগ্রহ করতে হলে, তা পাপড়িসহ সংগ্রহ করতে হয় এবং পলিব্যাগে পরিবহন করতে হয়। দূর থেকে আনা বা কাছাকাছি থেকে সংগ্রহ করা পুরুষ ফুল দিয়ে দ্রম্নত কৃত্রিম পরাগায়নের কাজ শেষ করতে হয়। পরাগায়নের সুবিধার্থে সুস্থ-সবল গাছ ও ফুল পেতে ক্ষেতে সুষম সার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হয়।

পরাগায়ন ও ফল ধারণ

পরিবেশ ও আবহাওয়াগত কারণে পরাগায়ন ও ফল ধারণ প্রভাবিত হয়। শশা, মিষ্টিকুমড়া ও তরমুজে পরাগায়ন সাধারণত সকাল ৮টার মধ্যে এবং লাউয়ের পরাগায়ন শেষ বিকাল থেকে সন্ধ্যার পর পর। করলার পরাগায়ন খুব ভোর থেকে সকাল ১০টার মধ্যে সম্পন্ন হয়। কুমড়া জাতীয় সবজির পরাগায়ন প্রধানত মৌমাছির দ্বারা সম্পন্ন হয়। তবে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত কীটপতঙ্গের অভাবে পরাগায় না হওয়ার কারণে ফলন কমে যায়। প্রাকৃতিক পরাগায়নের মাধ্যমে বেশি ফল ধরার জন্য হেক্টর প্রতি ২-৩টি মৌমাছির কলোনি স্থাপন করা প্রয়োজন। হাত দিয়ে পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায় করে ফলন শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। মৌবাক্স স্থাপন করলে ফুল আসার প্রাথমিক পর্যায়ে বেশি ফল হয় এবং বীজের পরিপক্কতার জন্য প্রচুর সময় পাওয়া যায়। এতে বীজের ফলন ভালো হয়। বীজের ভালো ফলন পেতে হলে কুমড়া ফসলের প্রতি লতায় ৪-৫টি ফল রাখতে হয়।

কৃত্রিম পরাগায়নের নিয়ম হলো ফুল ফোটার পর পুরুষ ফুল ছিঁড়ে নিয়ে ফুলের পাপড়ি অপসারণ করা হয় এবং ফুলের পরাগধানী (যার মধ্যে পরাগ রেণু থাকে) আস্তে করে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে (যেটি স্ত্রী ফুলের পাপড়ির মাঝখানে থাকে) ঘষে দিতে হয়। একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ৪-৫টি স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন করা যায়। বীজ উৎপাদনের জন্য জমির সবগুলো গাছের মধ্যে সতেজতা, ফলন ক্ষমতা ও সুস্থতা দেখে কয়েকটি গাছ নির্বাচন করতে হয়। এসব গাছে নিয়ন্ত্রিত পরাগায়ন করতে হয়। অর্থাৎ একই জাতের পুরুষ ফুলের পরাগ রেণু দিয়ে একই জাতের গাছের স্ত্রী ফুলের অথবা একই গাছের পুরুষ ফুলের পরাগ রেণু দিয়ে একই গাছের স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল ফোটার আগেই বাটার পেপার দিয়ে বেঁধে রাখাতে হয়। যাতে অন্য জাতের পুরুষ ফুল দ্বারার পরাগায়িত না হয়। ফুল ফুটলে স্ত্রী ফুল পরাগায়িত করে আবার ব্যাগিং করতে হয়। এই ব্যাগ দ্বারা ফল ৩-৪ দিন বেঁধে রাখা ভালো।

কুমড়াজাতীয় ফলের ফলন বৃদ্ধিতে পরাগায়ন বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই, ক্ষেতের গাছে বেশিসংখ্যক ফল ধারণে সঠিক নিয়মে পরাগায়নের বিকল্প নেই। ফুল ফোটার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে পরাগায়ন করতে পারলে ফল ধারণ অনেকটাই নিশ্চিত হয়।

লেখক: উদ্যান বিশেষজ্ঞ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুর অঞ্চল, রংপুর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<76765 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1