শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুষ্টি চাহিদা পূরণে দেশীয় ফল

কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম/ রঞ্জন কুমার সরকার
  ০৭ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
মৌসুমি ফল গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি, ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণ সম্ভব -যাযাদি

মানবদেহে খাদ্য উপাদানের মধ্যে ভিটামিন ও মিনারেলসের অন্যতম উৎস হলো ফলমূল। মূলত, ভিটামিন ও মিনারেলস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে এবং আমাদের শরীরকে খাদ্যের শর্করা, আমিষ ও চর্বির ব্যবহারে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে প্রতিদিন অন্তত গড়ে ১০০ গ্রাম বিভিন্ন ফল খাওয়া উচিত। বছরের প্রায় সব সময় কম-বেশি ফলমূল হয়ে থাকে। এ সমস্ত মৌসুমী ফল গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই শরীরের চাহিদা মোতাবেক পুষ্টি উপাদান/ভিটামিন ও মিনারেসের চাহিদা পূরণ সম্ভব। তা ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ের প্রক্রিয়াজাত ফলের তুলনায় আমাদের দেশে মৌসুমে ফলের স্বাদ ও পুষ্টি বেশি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ভরা মৌসুমে আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, আনারস, তরমুজ, পেয়ারা, বাঙ্গি, জামরুল, পেঁপে, শসা, লেবু, পানিফল, কলা, তালের শাঁস, বেল ইত্যাদি ফল প্রচুর পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন এবং মিনারেলসের সহজ ও সস্তা উৎস হলো এসব ফল। ফলে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রকার মিনারেলস যেমন- ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস এসব দেহের বিপাকীয় কার্যাবলী স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও ফল অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন- শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, পানি এসব দেহে সরবরাহ করে দেহকে সুস্থ রাখে। তাই আমাদের বিভিন্ন মৌসুমী ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।

আম : ফলের রাজা আমের স্বাদ, পুষ্টি ও গন্ধে অতুলনীয় জনপ্রিয় ফল। শুধু স্বাদে নয় পুষ্টিগুণেও ভরপুর আম। পাকা আম ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ১০০০-১৫০০ আইইউ ভিটামিন-এ থাকে। এ ছাড়া আমে ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি, খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম ও ক্যারোটিন থাকে। চোখের নানা রোগ, চুলপড়া, খসখসে চামড়া, হজমের সমস্যা ইত্যাদি দূর করে থাকে আম। এ ফল টনিক, বলকারক, মুখরোচক, রক্তপড়াবন্ধকরণ ও যকৃতের জন্য উপকারী।

জাম : জাম বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের একটি পরিচিত ফল। টাটকা ফল হিসেবে খাওয়া ছাড়াও এ ফল থেকে উপাদেয় রস, স্কোয়াসসহ বিভিন্ন খাদ্য তৈরি করা হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম জামে ১১ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১.৪০ গ্রাম শর্করা, ১.০ গ্রাম আমিষ, ০.৮০ গ্রাম চর্বি, ৩.৮০ গ্রাম আঁশ, ২২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪.৩০ মিলিগ্রাম লৌহ, ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১২০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন পাওয়া যায়। পাঁকা জামের রস সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে ৩-৪ ঘণ্টা পর খেলে পাতলা পায়খানা, অরুচি ও বমিভাবের উপশম হয়। জামের বীজ থেকে তৈরি পাউডার খেলে বহুমূত্র রোগ নিরাময় হয়।

কাঁঠাল : কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। কাঁঠালের প্রতিটি অংশই খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে ৪৮ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৯.৯০ গ্রাম শর্করা, ১.৮০ গ্রাম আমিষ, ২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২১ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ৪৭০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন বিদ্যমান। কাঁচা কাঁঠালে আঁশের পরিমাণ পাকা কাঁঠালের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য কাঁচা কাঁঠাল বেশি উপকারী। রক্তে চিনির মাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য কাঁচা কাঁঠালের জুড়ি নাই।

লিচু : লিচু বেশ পুষ্টিকর ও লোভনীয় ফল। ফলের রসালো অংশ তৃষ্ণা মেটাতে সাহায্য করে। কাঁশি, পেট ব্যথা ও টিউমার বৃদ্ধি রোধে লিচু অনেক উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬১ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১৩.৬০ গ্রাম শর্করা, ১.১০ গ্রাম আমিষ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৭০ মিলিগ্রাম লৌহ, ৩১ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি বিদ্যমান।

আনারস : আনারস পুষ্টিকর সুস্বাদু ফল। এটি মুখরোচক ফল। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে ৩০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৬.২০ গ্রাম শর্করা, ০.৯০ গ্রাম আমিষ, ১৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২১ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১৮৩০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন বিদ্যমান। কাঁচা আনারসের শাঁস ও রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কৃমি দমন হয়। এ ছাড়াও কফ, কাশি উপশমসহ জীবাণুনাশক, হজমকারক, মূত্রবর্ধক ও চর্মরোগহ নিবারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

পেয়ারা : কিছুদিন আগেও পেয়ারা শুধু নির্দিষ্ট মৌসুমে পাওয়া যেত। বর্তমান বছরব্যাপী বাজারে পেয়ারা পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশি ফল আপেলের বিকল্প হিসেবে সবাই পেয়ারা গ্রহণ করছে, এটা ভালো লক্ষণ। ভক্ষণযোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারাতে ৫১ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১১.২০ গ্রাম শর্করা, ০.৯০ গ্রাম আমিষ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন বিদ্যমান।

বাঙ্গি : রসালো ফল হিসেবে এ ফলের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এর পুরোটাই জলীয় অংশে ভরপুর। ভিটামিন সি, শর্করা ও সামান্য ক্যারোটিনসমৃদ্ধ হয় এই ফলটি। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম বাঙ্গিতে ১৭ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৩.৫০ গ্রাম শর্করা, ০.৩০ গ্রাম আমিষ, ৩২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১.৪০ মিলিগ্রাম লৌহ, ২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১৬৯ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন বিদ্যমান।

জামরুল : রসালো ও হালকা মিষ্টি জামরুল গ্রীষ্মকালে পাওয়া যায়। বর্তমানে সাদা, খয়েরি, লাল ও হালকা গোলাপি রঙের জামরুল দেখা যায়। এটি ভিটামিন বি-২ সমৃদ্ধ ফল। বহুমূত্র রোগীর জন্য জামরুল অনেক উপকারী। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম জামরুলে ৩৯ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৮.৫০ গ্রাম শর্করা, ০.৭০ গ্রাম আমিষ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১৪১ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন বিদ্যমান।

পেঁপে : পেঁপে বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ফল। পেঁপে স্বল্পমেয়াদি, সুস্বাদু, পুষ্টিসমৃদ্ধ ঔষধি গুণাবলিসম্পন্ন। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে ৪২ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৮.৩ গ্রাম শর্করা, ১.৯ গ্রাম আমিষ, ৩১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৫৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৮১০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন বিদ্যমান। কাঁচা পেঁপেতে 'পেঁপেইন' নামক হজমকারী দ্রব্য রয়েছে, যা খাদ্য হজমে সহায়তা করে এবং রোগীর পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অজীর্ণ, আলসার, একজিমা, কৃমির উপদ্রব, ত্বকের ক্ষত, যকৃতের জটিলতা, আন্ত্রিক ও পাকস্থলির ক্যান্সার, ডিপথেরিয়া নিরাময়ে পেঁপে বিশেষভাবে উপকারী।

পাকা কলা : বাংলাদেশে একটি অতি পরিচিত ফল কলা। কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কলার জুড়ি নেই। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম কলাতে ১০৯ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২৫.০০ গ্রাম শর্করা, ০.৭০ গ্রাম আমিষ, ১৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৯০ মিলিগ্রাম লৌহ, ২৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি বিদ্যমান।

তালের শাঁস : তাল গ্রামীণ জনপদের অতি পরিচিত ফল। যদিও তাল ভাদ্র মাসে পাকে। তবে কাঁচা/কচি তালের শাঁস বেশ জনপ্রিয়। এটি রসালো বলে দেহে শীতল আমেজ আনে। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে।

বেল : সারাবছরই কমবেশি পাওয়া গেলেও গরমকালে এই ফলের চাহিদা খুব বেশি দেখা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয় সারাতে বেশ খুব উপকারী। সর্দি, জ্বর, ক্ষুধাবৃদ্ধিসহ পাকস্থলী, মস্তিষ্ক, হৃৎপিন্ডের শক্তি বৃদ্ধিতে এ ফল বেশ উপকারী। এ ফলের পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে চোখের ছানি ও চোখ জ্বালা করা রোগের উপশম ঘটে। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম বেলে ৮৭ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১৮.৮০ গ্রাম শর্করা, ২.৬০ গ্রাম আমিষ, ৩৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ০.৬ মিলিগ্রাম লৌহ বিদ্যমান।

কামরাঙা : কামরাঙা একটি সুস্বাদু ও উপকারী ফল। এটি টকমিষ্টি জাতীয় ফল। এটি টাটকা অবস্থায় ও প্রক্রিয়াজাত উভয়ভাবেই খাওয়া যায়। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম কামরাঙায় ৫০ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৯.৫০ গ্রাম শর্করা, ০.৫০ গ্রাম আমিষ, ১ গ্রাম চর্বি, ১ গ্রাম আঁশ, ১১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৬১ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১.২১ মিলিগ্রাম লৌহ বিদ্যমান। কামরাঙা রুচিবর্ধক, ক্ষত নিরাময়কারী, পেট ফাঁপা, বমিভাব বন্ধ করায় বেশ কার্যকরী। শরীরের দুর্বলতা রোধ এবং প্রস্রাব পরিষ্কারক হিসেবে এর ভূমিকা রয়েছে।

আমলকি : অন্যান্য ফলের তুলনায় আমলকিতে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন-সি বিদ্যমান। ওষুধি ফল হিসেবেই আমলকি পরিচিত। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী আমলকিতে ১৯ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৩.৫০ গ্রাম শর্করা, ০.৯০ গ্রাম আমিষ, ৩.৪০ গ্রাম আঁশ, ৩৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪৬৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১.২০ মিলিগ্রাম লৌহ বিদ্যমান। ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, কাঁশি, হাঁপানি, বহুমূত্র, অজীর্ণ, জ্বর জ্বর ভাব, যকৃতের রোগ নিরাময়ে আমলকি বিশেষ উপকারী।

আমড়া : টক ফলের মধ্যে আমড়া অন্যতম। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী আমড়াতে ৬৬ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১৫ গ্রাম শর্করা, ১.১০ গ্রাম আমিষ, ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন- সি, ৩.৯০ মিলিগ্রাম লৌহ ও ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন ও ৮৩.২০ গ্রাম জলীয় অংশ রয়েছে। আমড়া পিত্ত ও কফ নিবারক, আমনাশক ও কণ্ঠস্বর পরিষ্কারক। এ ছাড়া রুচিবর্ধক হিসেবে আমড়া যথেষ্ট উপকারী।

আতা : আতা বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদের অতি পরিচিত ফল। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী আতা ফলে ৯০ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২০.৬০ গ্রাম শর্করা, ৩৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১.৫০ মিলিগ্রাম লৌহ ও ৭৬.৭০ গ্রাম জলীয় অংশ বিদ্যমান। আতা বলকারক, বাত ও পিত্তনাশক, বমননাশক, রক্ত ও মাংস বৃদ্ধিকারক।

তেঁতুল : ভেষজ গুণাবলিতে ভরপুর তেঁতুল। তেঁতুলের পুষ্টিমান ভালোমানের। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী পাকা তেঁতুলে ২৮৩ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৬৬.৪০ গ্রাম শর্করা, ৩.১০ গ্রাম আমিষ, ১৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি রয়েছে। রক্তের কোলেস্টেরল কমানো ও মেদভুঁড়ি কমাতে তেঁতুল বেশ উপকারী। তেঁতুলে বিদ্যমান টারটারিক এসিড খাদ্য হজমে সহায়ক। পেটের অম্স্নগ্যাস, পা জ্বালা উপশমে তেঁতুলের শরবত বেশ উপকারী। রাতে ঘুমানোর আগে তেঁতুলের শরবত খেয়ে ঘুমালে ঘুম ভালো হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<56995 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1