শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রীষ্মের বুনোফুল শটি

মোহাম্মদ নূর আলম গন্ধী
  ১৯ মে ২০১৯, ০০:০০

অযত্ন আর অবহেলায় গ্রাম-বাংলার পথে-প্রান্তরে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা বুনোফুল শটি। এটি বর্ষজীবী গুল্ম ও কন্দজাতীয় উদ্ভিদ। অঞ্চলভেদে শটি বন হলুদ, জংলি হলুদ, হুইড ইত্যাদি নামে পরিচিত। উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম-ঈঁৎপঁসধ ুবড়ফধৎরধ। গাছ উচ্চতায় গড়ে ৩ থেকে ৪ ফুট হয়। পাতা বেশ বড়, রং সবুজ, অগ্রভাগ সুচালো, মধ্যশিরা স্পষ্ট। তবে পাতার অগ্রভাগের উপরিঅংশ কিছুটা লালচে রঙের হয়। গাছ দেখতে প্রায় হলুদগাছের মতো। তবে শটির কন্দমূল সাদা এবং হলুদের কন্দমূল হলুদ। হলুদের পাতা চওড়ায় কম, শটির পাতা চওড়ায় বেশি। শটি গাছের জীবনকাল ৭ থেকে ৮ মাস। আর বাকি সময়টাতে এর কন্দ মাটির নিচে থাকে সুপ্ত অবস্থায়। শীতে শটিগাছ মারা যায় এবং বসন্তের শেষ দিকে গ্রীষ্মের শুরুতে এক পশলা বৃষ্টি পাওয়ার পর মাটিতে যখন রস আসে ঠিক তখনই গাছ ও ফুল মাটি ফুঁড়ে বের হয়ে আসে। অর্থাৎ কন্দ থেকে নতুন করে চারাগাছ জন্মে ও ফুল ফোটে। এর ফুল বড় মঞ্জরিদন্ডে ঊর্ধ্বমুখী। দন্ডে পাপড়িগুলো সুবিন্যস্তভাবে সাজানো থাকে। দন্ড দৈর্ঘ্যে প্রায় ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি হয়ে থাকে। ফুটন্ত ফুল রঙে লাল, গোলাপি-লাল, বেগুনি ও হলুদ আভায় মিশ্রিত। ফুল বেশ দৃষ্টিনন্দন ও নজরকাড়া। সৌন্দর্যের দিক দিয়ে অপরূপ। যে কারও নজর কাড়ে। প্রস্ফুটন সময়কাল গ্রীষ্ম। কন্দের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। শটি যেখানে জন্ম নেয় সেখানে ঝোপালো আকার ধারণ করে। একবার কন্দ থেকে চারাগাছ জন্ম নিলে চারা ও গাছের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ ফুলগাছ বেশ কষ্ট সহিষ্ণু। রোগ ও পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু ভূমি ও প্রায় সব ধরনের মাটিতে শটিগাছ জন্মে। অনুর্বর, আর্দ্র, স্যাঁতসেঁতে ও হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে এ ফুলগাছ ভালো বাড়বাড়তি হয়। বাংলাদেশের প্রকৃতি পরিবেশে শটি ফুলগাছ অনায়াসে জন্মাতে দেখা যায়। তাই তো গ্রামীণ রাস্তার ধার, পতিত জমি, পাহাড়ি জমি, বাসা-বাড়ির আশপাশে এগাছ দেখা যায়। বর্তমান সময়ে এ গাছ আগেকার মতো আর চোখে পড়ে না ক্রমেই কমে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার শুরুর আগে শটি গাছের পাতা গ্রামীণ জনপদের মানুষজন নানান কাজে ব্যবহার করতেন। যেমন-লবণ, গুড়, মাছ, শুঁটকি মাছ ইত্যাদি হাট-বাজারে শটি পাতায় প্যাকেট হতো। তবে গ্রাম-বাংলার কোনো কোনো স্থানে এর ব্যবহার এখনো চোখে পড়ে। তা ছাড়া শটি গাছের রয়েছে ভেষজ নানান গুণাগুণ। এতে আছে সিনিওল সেসকুইটারপিন। শটির কন্দ থেকে তৈরিকৃত বার্লি ডায়রিয়া ও জ্বর নিবারণে কাজ করে। পেট ফাঁপা ও নানা প্রকার চর্মরোগে ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো জনগোষ্ঠীর মানুষজন শটির কন্দ সবজি হিসেবেও খান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<50021 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1