বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পোকা দমনে সাড়া ফেলেছে পার্চিং

মো. নজরুল ইসলাম, মধুপুর
  ১০ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় এ বছর বোরো ধান ক্ষেতে পোকা দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ উপজেলার কৃষকরা তাদের বোরো ফসলের ক্ষেতে বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডাল পুঁতে এবং ধইঞ্চা রোপণ করে দিচ্ছেন। এসব বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি, বাঁশের মাচান বা আড় এবং ধইঞ্চার ডালে বিভিন্ন ধরনের পোকাখাদক পাখি বসে ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলছে এবং ওইসব পাখি পার্চিংয়ে বসে ক্ষণিক সময়ের বিশ্রামও নিচ্ছে। এভাবে কীটনাশক ছাড়াই পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছ রক্ষা পাচ্ছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি বিভাগ।

মাটি, ফসল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশকের পরিবর্তে ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহারে কৃষকরা বেশি সচেতন এখন। পার্চিং পদ্ধতি হচ্ছে পাখির মাধ্যমে ফসলের পোকা দমনে উত্তম ব্যবস্থা। কৃষি অফিস উপজেলার সব এলাকায় কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাচির্ং উৎসবের আয়োজন করেছে। এর ফলে কৃষকরা একদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে পরিশ্রমও কমে যাচ্ছে।

কৃষি অফিস জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে মধুপুরে ১২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। সাধারণত ধানগাছে মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, খাটসুর, ঘাসফড়িং ও পাতাফড়িং আক্রমণ করে। পোকাখাদক পাখি জমিতে পুঁতে রাখা পার্চিংয়ে বসে এসব ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলে। ফলে এর মাধ্যমে অতি সহজেই ক্ষতিকর পোকা দমন করা সম্ভব হয় এবং নিরাপদ হয় ফসল।

গত বৃহস্পতিবার উপজেলার কদিমহাতীল গ্রামে পালিত হলো পার্চিং উৎসব। উপজেলার কুড়ালিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক কৃষককে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে বোঝান উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সুব্রত দেবনাথ। উৎসবে জানানো হয় উপজেলায় পার্চিং পদ্ধতি ব্যাপকহারে সাড়া ফেলেছে।

পার্চিং সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে, ডেড পার্চিং ও লাইফ পার্চিং পদ্ধতি। ফসলের জমিতে পাখি বসার উপযোগী বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি, বাঁশের মাচান বা আড় এবং গাছের ডাল পুঁতে যে পার্চিংয়ের ব্যবস্থা করা হয় তাকে ডেড বা মৃত পার্চিং বলে এবং ধইঞ্চা রোপণ করে ফসলের জমিতে পাখি বসার উপযোগী করাকে লাইফ পার্চিং বলে। লাইফ পার্চিং ফসলের ক্ষেতে দুই ধরনের উপকারে আসে। যেমন- পোকাখাদক পাখি বসে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খায় এবং ধইঞ্চার শিকড়ে এক ধরনের গুটির জন্ম হয়। এই গুটি থেকে নাইট্রোজেন উৎপন্ন হয়। যা ইউরিয়া সারের কাজ করে। তবে ধনবাড়ী উপজেলায় যে সব পার্চিং ব্যবহার হচ্ছে তার সিংহভাগই হলো ডেড বা মৃত পার্চিং।

উপজেলার কদিমহাতীল গ্রামের কৃষক শেখ সোহরাব হোসেন ও মো. মনিরুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর আগেও আমাদের মাঠের সব জমির ধানেই পোকায় আক্রমণ করত। অনেক সময় টাকার অভাবে বিষ দিতে পারিনা বা দিলেও কাজ হয় না। উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সুব্রত দেবনাথের পরামর্শে পার্চিং ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছি।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান জানান, পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এলাকার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে এর উপকারিতা সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সুষম সার, ধান ক্ষেতের পোকা দমনের জন্য পার্চিং ব্যবহার পদ্ধতি ইতোমধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<40210 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1