শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কুতুবপুর কলার হাটে

মো.নজরুল ইসলাম, মধুপুর
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

দেশের সবচেয়ে বড় কলার বাজার ‘কুতুবপুর কলার বাজার’। টাঙ্গাইলের সখীপুর, ঘাটাইল এবং ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ও ভালুকা উপজেলার সীমান্তে কুতুবপুর বাজার। ঢাকা-সাগরদীঘি সড়কের কুতুবপুর নামক স্থানের রাস্তার দুপাশে বসে দেশের এই বৃহৎ কলার হাট। এটি কলার রাজধানী হিসেবেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সপ্তাহের দুদিন রোববার ও বুধবারে কুতুবপুর বাজারে হাট বসে। এ হাট থেকে প্রায় কোটি টাকার কলা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এর মধ্যে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার কলা যায় ঢাকা নগরীসহ জেলার বিভিন্ন বাজারে। আর বাকি কলা যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে।

কুতুবপুর বাজারের কলা ব্যবসায়ীরা জানান, এতদঞ্চলের সবচেয়ে বড় কলার হাট টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কুতুবপুর বাজার। এখানে উপজেলার কুতুবপুর, বড়চওনা, দাড়িপাকা, শ্রীপুর, তৈলধারা, মুচারিয়া পাথার, শালগ্রামপুর, ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি, জোড়দীঘি, গারোবাজার, মধুপুর উপজেলার মহিষমারা, শালিকা, আশ্রা, নেদুরবাজার এবং ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কৈয়াদি, ফুলবাড়িয়া উপজেলার ফুলতলা, এনায়েতপুরসহ বিভিন্ন উপজেলার উৎপাদিত কলা বিক্রি হয় এই হাটে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শনিবার বিকাল থেকে রোববার দুপুর ১২টা পযর্ন্ত এবং মঙ্গলবার বিকাল থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পযর্ন্ত কলা আসতে থাকে। কলাচাষি এবং ছোট ব্যবসায়ীরা এ হাটে কলা আমদানি করেন। এরপর তাদের কাছ থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সেগুলো কিনে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করেন।

কুতুবপুর হাটের কলার আড়তদার কালাম মিয়া জানান, প্রতি হাটে এখান থেকে ১২ থেকে ১৫ ট্রাক কলা দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। কলা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এখানে সাতটি আড়ত গড়ে উঠেছে। কুতুবপুর বাজার ব্যবসায়ী, আড়তদার ও স্থানীয়দের কাছে কলার রাজধানী হিসেবে পরিচিতিও পেয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি বুধবার কুতুবপুর হাট ঘুরে ব্যবসায়ী ও কলা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর কলার দাম অনেকটা বেশি। প্রতি কঁাধি কলা এখন বিক্রি হচ্ছে ১শ থেকে ৫শ টাকা দরে। কলার কঁাধির ওপর নিভর্র করে দাম কমবেশি হয়ে থাকে বলে জানান কলা ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন। তিনি আরো জানান, এ বাজারের কলাগুলো খুবই উন্নত মানের এবং এখানকার কলার চাহিদা দেশের সবর্ত্রই রয়েছে। এ কারণে এখানে কলার দামও একটু বেশি। ১৫ থেকে ১৮ ছড়ি মধ্যম মানের একটি কলার কঁাধি বিক্রি হয় অন্তত ৩শ টাকা দরে। এর চেয়ে ভালো মানের কলা বিক্রি হয় ৫শ টাকা পযর্ন্ত।

কুতুবপুর (চারিবাইদা) গ্রামের কলাচাষি নবাব আলী এবং স্থানীয় দোকানদার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দেশের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় কলার হাট। অন্যান্য বাজারেই তুলনায় এ বাজারে বেশি কলা বিক্রি হয়। দামটাও কিছুটা ভালো পাওয়া যায়। এ কারণে কুতুবপুরে কলার আমদানিও বেশি হয়।

গারোবাজারের কলাচাষি হায়েত আলী জানান, এ বছর তিনি সাড়ে চার বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ৩০০টি হিসাবে সাড়ে পঁাচ বিঘা জমিতে এক হাজার ৫০০টি কলা গাছ লাগিয়েছেন। প্রতি বিঘা জমি থেকে অন্তত ৮০ হাজার টাকার কলা বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। তিনি আরো জানান, প্রতি বিঘা জমিতে কলা চাষ করতে তার ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মজিবুর রহমান ফকির বলেন, এ বাজারে সপ্তাহে প্রায় কোটি টাকার কলা বেচাকেনা করা হয়। তা ছাড়া এ বাজার জেলার মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত কলার বাজার বলে খ্যাতি পেয়েছে। বাজারের ইজারাদার মো. হারুন অর রশিদ জানান, ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে খাজনার হয়রানি না থাকায় বাজারের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কঁাধিপ্রতি এক টাকা হারে খাজনা আদায় করা হয়। বাজারের কুলি শ্রমিক সদার্র মো. হায়দার আলী জানান, কঁাধিপ্রতি তিন টাকা হারে লেবারি নেয়া হয়। কুতুবপুর রওশন উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দেশের আর কোথাও এত বড় কলার হাট চোখে পড়ে না। সারা দেশেই কুতুবপুর বাজার কলার জন্য বিখ্যাত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<34976 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1