শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমড়ার এখন ভর মৌসুম

লেখক : টেকনিক্যাল পাটিির্সপেন্ট, কৃষি তথ্য সাভির্স বরিশাল
  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

নাহিদ বিন রফিক

আমড়া, আমড়া, মিষ্টি আমড়া; বরিশালের আমড়া। নৌ, সড়ক কিংবা রেলপথে রওনা হলে হকারদের এসব শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে মাঝরাত পযর্ন্ত চলে ওদের ডাকাডাকি। কিছুটা বিরক্ত লাগে। তবে কাঠিতে বসানো আমড়া নিয়ে যখন আশপাশে ছোটাছুটি করে তখন জিবে জল রাখা দায়। ফলগুলোকে ওরা বিশেষভাবে কেটে পরিবেশন করে। দেখতে দারুণ! এক বিশেষ আকষর্ণ। মনে হবে, এ যেন শিল্পীর কারুকাজ। লুফে নিতে ইচ্ছে করবে বারবার। সে আমড়া বাঙালির অতি প্রিয় একটি ফলের নাম। টক-মিষ্টি মিশ্রণে ভিন্ন এক স্বাদ। কচি অবস্থায় টক। পরিপক্ব হলে খেতে বেশ লাগে। পাকা ফল খুবই মিষ্টি। আমড়ার সিংহভাগ কঁাচা খাওয়া হলেও ভতার্, আচার, চাটনি আর পরিপক্ব ফল দিয়ে তৈরি করা যায় জুস, জেলি এবং মোরব্বার মতো লোভনীয় খাবার। গ্রামাঞ্চলের কেউ কেউ গোশতের সঙ্গে আমড়া রেঁধে খান। ডালের সঙ্গেও খাওয়া যায়। আমড়ার শঁাস সাদা। পাকলে হলুদ রং ধারণ করে। যে কারণে একে গোল্ডেন আপেল বলে। আমড়ায় তেমন কোনো রোগ-পোকার আক্রমণ হয় না। উৎপাদন খরচ কম পড়ে। অন্য যে কোনো ফলের চেয়ে আমড়া বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায়। এতে কোনো ধরনের রাসায়নিক পদাথর্ও ব্যবহার করতে হয় না। তাই এ ফল স্বাস্থ্যসম্মতও। কৃষকরা আমড়া চাষ করে অতি সহজেই হতে পারেন স্বাবলম্বী। আমড়াগাছ মাঝারি থেকে কিছুটা বড় আকৃতির হয়। গাছের উচ্চতা ৩০-৪০ ফুট। গাছের প্রতিডঁাটায় সমান্তরাল কয়েক জোড়া পাতা থাকে। অগ্রভাগে থাকে একটি পাতা। ডাল খুবই নরম। কাÐও তাই। যে কারণে বাংলা ব্যাকরণের বাগধারায় অপদাথের্ক ‘আমড়া গাছের ঢেঁকি’ বলা হয়। কাঠের গুণাগুণ না থাকতে পারে। কিন্তু ফল ধারণে অনন্য। অগ্রহায়ণের শেষের দিকে গাছের পাতা ঝরা শুরু করে। মাসখানিক পাতাশূন্য থাকে। মাঘ-ফাল্গুনে মুকুল আসে। এর পরে ফল। কচি অবস্থায় ফলের বিচি নরম থাকে। পরিপক্ব হলে অঁাটি বেশ শক্ত হয়। কাতির্ক-অগ্রহায়ণে ফল পাকে। পাকা ফলের গন্ধ চমৎকার।

আমড়া সারা দেশেই চাষ করা যায়। তবে বরিশালের আমড়া সারাদেশে নামকরা। দক্ষিণাঞ্চলের মাটি ও পানির জন্য এর ফলন ও গুণগতমান কাক্সিক্ষত হয়। আমড়া ল্যাটিন আমেরিকার স্থানীয় ফল হলেও বতর্মানে দক্ষিণ-পূবর্ এশিয়ায় চাষাবাদ বেশি হচ্ছে। প্রসিদ্ধ হিসেবে সবাই বরিশালের আমড়া বললেও আসলে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিকে (নেছারাবাদ) আমড়ার রাজধানী বলা যায়। কারণ, ওখানকার ফলন হয় সবচেয়ে বেশি। ঝালকাঠি, বরিশাল, ভোলা এবং বরগুনায়ও আমড়া ভালো জন্মে। এসব এলাকায় পেয়ারার পাশাপাশি আমড়া চাষ হয় সমানতালে। বষাের্মৗসুমে ওখানকার নিচুজমিগুলো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার কারণে স্থানীয় কৃষকরা উঁচু করে কান্দি বা বেড তৈরি করেন। এ পদ্ধতিকে সজার্ন বলে। দুই বেডের মাঝখানে প্রশস্ত নালা থাকে, যাতে ছোট নৌকাযোগে ফল সংগ্রহ করতে সহজ হয়। চাষিরা গাছ থেকে আমড়া সংগ্রহ করে নিয়ে যান ভাসমান হাটে। সেখানে আমড়া কেনার জন্য শত শত ট্রলারসহ পাইকারি বিক্রেতা জমা হন দলেদলে। ওখান থেকে সরবরাহ করা হয় সারাদেশে। এসব হাটগুলোর মধ্যে ঝালকাঠি সদরের ভীমরুলি, বাউকাঠি, নবগ্রাম এবং নেছারাবাদের আটঘর, কুড়িয়ানা, জিন্দাকাঠি, আদমকাঠি, ধলহার অন্যতম। এক মেট্টিক টন আমড়ার বাজারদর (পাইকারি) ২২ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা। আর খুচরামূল্য কেজিপ্রতি ২৮-৩০ টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, গত বছর (২০১৭-২০১৮ খ্রি.) বরিশাল অঞ্চলে ২০ হাজার ৭১ হেক্টর জমিতে আমড়া চাষ হয়েছিল। যার মধ্যে বরিশালে ৩৫৩ হেক্টর, ঝালকাঠিতে ৫৯১ হেক্টর, পিরোজপুরে ৪৯৩ হেক্টর, পটুয়াখালীতে ২৫৯ হেক্টর, বরগুনায় ২০৫ হেক্টর এবং ভোলায় ১৭০ হেক্টর। উপজেলাওয়ারি সবোর্চ্চ জমির পরিমাণ ঝালকঠির সদর এবং রাজাপুরে। দুই উপজেলায় ২৬০ হেক্টর করে। চলতি বছরে চাষের পরিমাণ বেড়েছে। নেছারাবাদের (স্বরূপকাঠি) উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রিফাত শিকদার জানান, গতবার তার উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৪৭৫ মেট্টিক টন আমড়া উৎপাদন হয়েছিল। এবার আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে ১৫২ হেক্টর জমিতে ১৭ মেট্টিক টন হারে ফলন পাবেন বলে আশা করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13721 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1