বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইলিশের জিনোমে প্রায় ৭৭ লাখ নিউক্লিওটাইড

মো. নাবিল তাহমিদ, বাকৃবি
  ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
ইলিশ হাতে বাকৃবির চার গবেষক

বিশ্বে প্রথমবারের মতো ইলিশের পূণার্ঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উদঘাটন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ইলিশের জিনোমে মোট ৭৬ লাখ ৮০ হাজার নিউক্লিওটাইড খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। জিনোম সিকোয়েন্সের এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ইলিশের উচ্চফলনশীল ও পরিবতর্নশীল বৈশ্বিক আবহাওয়া-সহনশীল জাত উন্নয়নসহ টেকসই আহরণ ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যাবে। ওই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম।

অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম বলেন, যে কোনো প্রাণীর জীবনের সব রহস্যই লুকিয়ে থাকে তার ডিএনএ-তে। জীবের সব জৈবিক বৈশিষ্ট্য ডিএনএ-তে বিন্যস্ত থাকে। প্রতিটি জীবের ডিএনএর একটি স্বতন্ত্র বিন্যাস রয়েছে। ডিএনএর মধ্যে নিউক্লিওটাইড সমূহ যে ক্রমানুসারে বিন্যস্ত থাকে তাকেই ওই জীবের পূণার্ঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স বলে। ইতোমধ্যেই অনেক জীবের জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে। মানুষের জিনোমে প্রায় ৩ বিলিয়ন নিউক্লিওটাইড রয়েছে। অন্যদিকে আমরা ইলিশের জিনোমে মোট ৭৬ লাখ ৮০ হাজার নিউক্লিওটাইড খুঁজে পেয়েছি। এ ছাড়া আমরা ইলিশের জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে ২১,৩২৫টি মাইক্রোস্যাটেলইট ও ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০০টি সিঙ্গেল নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজম আবিষ্কার করেছি। বতর্মানে পূণার্ঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে ইলিশ জিনোমে জিনের সংখ্যা জানার কাজ অব্যাহত রয়েছে।

জিনোম সিকোয়েন্সের প্রভাব সম্পকের্ তিনি বলেন, ইলিশের পূণার্ঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স জানার মাধ্যমে অসংখ্য অজানা প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে খুব সহজেই। বাংলাদেশের জলসীমার মধ্যে ইলিশের স্টকের সংখ্যা (একটি এলাকায় মাছের বিস্তৃতির পরিসীমা) কতটি এবং দেশের পদ্মা, মেঘনা নদীর মোহনায় প্রজননকারী ইলিশগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্টক কিনা তা জানা যাবে এই জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে। বছরে দুইবার ইলিশ প্রজনন করে থাকে। জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে এই দুই সময়ের ইলিশ জিনগতভাবে পৃথক কিনা তা জানা যাবে। এমনকি কোনো নিদির্ষ্ট নদীতে জন্ম নেয়া পোনা সাগরে যাওয়ার পর বড় হয়ে প্রজননের জন্য আবার একই নদীতেই ফিরে আসে কিনা সেসব তথ্যও জানা যাবে এই জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে।

জিনোম সিকোয়েন্স করার প্রক্রিয়া সম্পকের্ তিনি বলেন, ইলিশের পূণার্ঙ্গ জিনোম নিয়ে আমরাই প্রথম কাজ শুরু করি এবং আমাদের কাজ আন্তজাির্তকভাবে স্বীকৃতিও পেয়েছে। পূণার্ঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর জন্য আমরা মেঘনা ও বঙ্গোপসাগর থেকে পূণর্বয়স্ক ইলিশ মাছ সংগ্রহ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশ জেনেটিক্স অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি ও পোল্ট্রি বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনোমিক্স ল্যাররেটরিতে উচ্চমানের জিনোমিক ডিএনএ প্রস্তুত করি। পরে যুক্তরাষ্ট্রের জেনেউইজ জিনোম সিকোয়েন্সিং সেন্টারে মেঘনা ও বঙ্গোপসাগর হতে সংগৃহীত ইলিশের পৃথকভাবে প্রাথমিক ডাটা সংগ্রহ করি। এরপর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সাভার্র কম্পিউটারে বিভিন্ন বায়োইনফরম্যাটিক্স প্রোগ্রাম ব্যবহার করে সংগৃহীত প্রাথমিক ডাটা থেকে ইলিশের পূণার্ঙ্গ ডি-নোভো জিনোম অ্যাসেম্বল সম্পন্ন করেছি। ইতোমধ্যে আন্তজাির্তক জিনোম ডাটাবেজে ইলিশের পূণার্ঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স আমরা জমা করেছি। এ ছাড়া ইলিশের জিনোম বিষয়ে আমাদের গবেষণালব্ধ ফলাফল আন্তজাির্তক কনফারেন্সে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলদেশের মৎস্য সেক্টর পূণার্ঙ্গ জিনোম গবেষণার যুগে প্রবেশ করেছে।

পূণার্ঙ্গ ইলিশ জিনোম সিকোয়েন্সিং ও অ্যাসেম্বলি টিমের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম এবং সদস্য হিসেবে ছিলেন পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্যা, বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম ও ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম কাদের খান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<12641 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1