এমন ঘটনা এখন কমই ঘটে। দেশীয় চলচ্চিত্রে ক্রমেই কমে আসছে ছবি মুক্তির সংখ্যা। এই তো কয়েক বছর আগেই প্রতি শুক্রবারে তিন-চারটা ছবি মুক্তির তোড়জোড় ছিল। বতর্মানে সপ্তাহে দুটি ছবি মুক্তি পাওয়া অনেকটাই দুষ্কর বলা চলে। কোনো কোনো সপ্তাহে একটি ছবিই মুক্তি পেতে যায়। আর এই পরিবেশে একদিনেই মৌসুমীর দুইটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। আসন্ন বিজয় দিবস উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে ইসলাম হাবিব পরিচালিত ‘রাত্রির যাত্রী’ এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত আবীর খান ও রাশেদ শামীম পরিচালিত ‘পোস্টমাস্টার ৭১’ ছবি দুটি। এর মাধ্যম দীঘির্দন পর একদিনে দুই ছবি মুক্তি পাচ্ছে তার। এ যেন নিজের সঙ্গে নিজেরই লড়াই। যদিও এটাকে লড়াই বলতে আপত্তি জানালেন মৌসুমী। বললেন, ‘এটা আমার এক ধরনের ভালো লাগা। সৌভাগ্যও বলতে পারেন। কারণ ঢাকাই সিনেমার এমন দুদিের্ন একজন নায়িকার একদিনে দুই দুইটি ছবি মুক্তি পাওয়া ক্যারিয়ারের জন্য ইতিবাচক হিসেবেই মনে করছি আমি। ছবিতেই গুরুত্বপূণর্ চরিত্রে অভিনয় করেছি আমি। দুটি ছবিতেই উঠে এসেছে দেশপ্রেম এবং মুক্তিযুদ্ধের কথা। ‘পোস্টমাস্টার ৭১’ ‘সত্য ঘটনার ওপর নিমির্ত। পাবনা জেলার সঁাথিয়া উপজেলার একজন পোস্টমাস্টারের জীবনের ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘ছবিটি। এটি একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পের সিনেমা। এতে আমার বিপরীতে আছেন ফেরদৌস। এর আগেও ফেরদৌসের সঙ্গে আমার অভিনীত অনেক সিনেমাই দশর্কপ্রিয়তা পেয়েছে। আশা করি, এতেও দশর্ক ভিন্নতা খেঁাজে পাবেন। ছবিতে আমার সঙ্গে আরও অভিনয় করেছেন নাদের চৌধুরী, এস এম মকবুল হাসান, রাশেদ শামীমসহ আরও অনেকে। ছবিটি যে মুক্তি পাচ্ছে, তাতেই উচ্ছ¡সিত আমি। কারণ, দীঘির্দন ধরে ছবিটি মুক্তির অপেক্ষায় ছিল। তিন বছর আগে ছবিটি শুটিং করেছিলাম। ছবিটির নিমার্ণকাজ শেষ হওয়ার পর অনেক ঝক্কি-ঝামেলায় পড়ে। মুক্তির তারিখ নিয়েও দেখা দেয় জটিলতা। ছবিটি মুক্তিযুদ্ধের হলেও এতে দশর্ক ভিন্ন কিছু পাবে।’’ ‘রাত্রির যাত্রী’ নিয়ে মৌসুমী বলেন, ‘ভিন্নধমীর্ গল্পের একটি সিনেমা ‘রাত্রির যাত্রী’। ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছি আমি। ভালো লাগছে এত সুন্দর একটি চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে। এখানে দেখা যাবে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে বিশেষ একজনের টানে আসে একজন নারী। কিন্তু মেয়েটিকে সে আর নিতে আসে না। এদিকে ক্রমেই নানা জটিলতার মধ্যে পড়ে যায় সে। এতে তুলে ধরা হবে একজন নারীর স্বপ্নযাত্রা এবং স্বপ্নপূরণের কথা। যাতে রাতে চোখের সামনে ঘটা নানা ঘটনা তাকে অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। এই ছবিতে আমার সঙ্গে কাজ করেছেন আনিসুর রহমান মিলন, প্রথমবার একসঙ্গে কাজ করলাম আমরা। মিলন ভালো অভিনয় করেন, এটা জানতাম। কিন্তু এত ভালো অভিনয় করেন তা জানা ছিল না; যদি তার সঙ্গে কাজ না করতাম। এক কথায় অসাধারণ অভিনেতা মিলন। সবমিলিয়ে আশা করছি, দশর্কদের ভালো কিছু উপহার দিতে পারব। ’ ‘রাত্রির যাত্রী’ ছবিটির প্রচারণা নিয়ে রীতিমত উঠেপড়ে লেগেছেন মৌসুমী। এরই মধ্যে দেশের অনেক জেলা এমনকি স্কুল-কলেজের শিক্ষাথীের্দর মধ্যেও এই প্রচারণা ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রচারণায় অংশগ্রহণ নিয়ে মৌসুমী বলেন, ‘আমার অভিনীত বেশ কিছু সিনেমাই মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু সত্যি বলতে কী বিভিন্ন স্থানে সিনেমার প্রচারণায় যাওয়ার মতো পরিবেশ সবসময় হয়ে উঠে না। কিন্তু রাত্রির যাত্রীর ইউনিভাসিির্ট কেন্দ্রিক প্রচারণায় বিষয়টি আমার কাছে ভালো লেগেছে। তাই ছবির পরিচালক হাবিব ভাই যখন আমাকে বিষয়টির প্রস্তাব দেন তখন শিক্ষাথীের্দর কথা চিন্তা করেই আমি রাত্রির যাত্রীর ইউনিভাসিির্ট কেন্দ্রিক প্রচারণায় অংশ নিয়েছি। আমি শিক্ষাথীর্সহ সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করব রাত্রির যাত্রী দেখার জন্য। একটি রাতের ঘটনার মধ্য দিয়ে রাজধানীর এ সময়ের সাবির্ক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমায়। আশা করি, দশের্কর ভালো লাগবে।’ শুধু ‘পোস্টমাস্টার ৭১’ কিংবা ‘রাত্রির যাত্রীই নয়, সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে মৌসুমী অভিনীত লিডার নামের একটি ছবি। এখানেও নাম ভ‚মিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে নিমির্ত এ ছবিটিও নতুন করে আলোচনায় এনে দিয়েছে তাকে। যদিও অনেক কাটা-ছেঁড়া করে ছবিটি মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। মৌসুমী বলেন, প্রাণের টানেই মুক্তিযুদ্ধ তথা দেশাত্মবোধক ছবিতে কাজ করি। আমি নিজেও দেশের প্রতি সারাক্ষণ একটা টান অনুভব করি। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করতে। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে আজীবন বেঁচে থাকতে। এমনকি মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকতে চাই। আমি মনে করি, একজন অভিনেতা কিংবা অভিনেত্রীর কখনো মৃত্যু হয় না। কাজের মধ্যে দিয়েই অমর হয়ে থাকেন তিনি। এ কারণেই বতর্মানে বেছে বেছে ভিন্নধারার এবং ঐতিহাসিক গল্পের ছবিতে কাজ করছেন তিনি। ‘মধুর ক্যান্টিন’ তেমনই একটা ছবি। মৌসুমী জানালেন, বতর্মানে তার হাতে রয়েছে বেশ কয়েকটি ছবি। তারমধ্যে ‘মধুর ক্যান্টিন’ পুরোপুরি ব্যতিক্রম। ছবিটি পরিচালনা করছেন খ্যাতিমান পরিচালক সাঈদুর রহমান সাঈদ। মুক্তির অপেক্ষায় রাশেদ রাহা পরিচালিত ‘নোলক’ ছবিটি। একজন অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে কতটা পূণর্ মনে করেন? জবাবে মৌসুমী বলেন, ‘সত্যিকারের একজন শিল্পী অভিনয়ের পথচলায় নিজেকে কখনই পরিপূণর্ মনে করেন না। আর এ অপরিপূণর্তা নিয়েই কিন্তু এক সময় এ পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান। শিল্পীর মনে নতুন নতুন চরিত্রে কাজ করার আকাক্সক্ষা থেকেই যায়। আমারও সেই অতৃপ্তি আছে, চ্যালেঞ্জিং আরও নতুন চরিত্রে কাজ করার ক্ষুধা আছে। হ্যঁা, এটা সত্যি, একটি চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে কাজ করে সাময়িক সময়ের জন্য ক্ষুধা নিবারণ হয়, কিন্তু পরে আবার সেই ক্ষুধা সৃষ্টি হয়। শিল্পীর মন এমনই। যে বয়সে যে চরিত্রে কাজ করা প্রয়োজন তা করতে না পারলেও আজীবন ক্ষুধা থেকে যায়। আমি এমনভাবে চলচ্চিত্রে কাজ করে এসেছি, যে সময়ে যে বয়সে, যে চরিত্রে অভিনয়ের আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে, করার চেষ্টা করেছি। যে কারণে আমার বয়স, মনমানসিকতার সঙ্গে যায় এমন চরিত্রে কাজ করেছি। সেসব কাজ দিয়ে দৃষ্টান্ত রাখার চেষ্টা করেছি। তবে পূণর্তা পাবে যদি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, সমাজের অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে পারি। এখনতো অনেককেই রাজনীতিতে আসছেন। আপনাকে কবে দেখা যেতে পারে? মৌসুমী বলেন, ‘আমার স্বামী যদি চান এবং যদি কখনও মনে হয় যে, জাতীয় রাজনীতিতে আসা যেতে পারে, তখন এটা নিয়ে ভাবতে পারি। তবে তারও আগে এর ওপর আমার অনেক পড়াশোনাও করতে হতে পারে। যা-ই করি না কেন, একটু ভেবেচিন্তেই করতে হবে। সত্যি বলতে কী, এ বিষয়টি নিয়ে এখনো তেমন কিছু ভাবিনি।’